কিছু বিরল উপন্যাস থাকে যা পড়ার সময় পাঠক সূক্ষ্মভাবে একাত্ম হয়ে যান চরিত্রদের সাথে। যেখানে লেখক পাঠককে কাহিনীর সময়কালে পৌঁছে দেন তাঁর লেখনীর মাধ্যমে। বিশেষ করে তা যদি বাস্তব ইতিহাসের কোনো সময়কাল ও চরিত্র ভিত্তিক হয় তাহলে তো কথাই নেই। সেই সময়ের রূপ রস বর্ণ গন্ধ সবই তখন পাঠক অনুভব করতে পারেন। পাতার পর পাতা শেষ করেও ক্লান্তি আসা তো দূরের কথা, ক্ষিদে তেষ্টাও ভুলে যেতে হয়। তথ্যের ভারে বোঝাই নয় অথচ তথ্যবহুল এই উপন্যাস। কাহিনীর চরিত্রদের সংলাপগুলি পড়লে বোঝা যায় যে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ের কথ্য ভাষাকেই লেখক সযত্নে চরিত্রদেরকে দিয়ে বলাননি, সেই সময়ের আধ্যাত্নিক চেতনা ও দর্শনকেও পাঠকমনে সঞ্চারিত করেছেন। মূল কাহিনীটি অতীতকালের দুটি টাইমলাইনে বর্ণিত। যেখানে ফ্ল্যাশব্যাক পদ্ধতিতে, কথক চরিত্র চিনিবাস শ্রাবণের এক বর্ষণক্লান্ত দ্বিপ্রহরিক গল্প-আসরে, কাহিনীর মূল চরিত্র গদাইয়ের পারিবারিক ইতিহাস গল্প হিসাবে বর্ণিত করেছেন। কাহিনীর প্রথম পৃষ্ঠার শুরুরতেই লেখক যে আবহ তৈরি করেন তা পাঠককে নিমিষে মোহাবিষ্ট করে ফেলার ক্ষমতা রাখে।যেমন... 'আষাঢ় চলিয়া গিয়া শ্রাবণ আসিয়া পড়িয়াছে। সকাল হইতে ঝুম
Posts
সুস্নাত চৌধুরীর 'শুঁড়ির সাক্ষী'....পাঠ প্রতিক্রিয়া- অর্ণব রায়
- Get link
- Other Apps
বই - শুঁড়ির সাক্ষী লেখক - সুস্নাত চৌধুরী প্রকাশক - ইতিকথা মুদ্রিত মূল্য - ১২৫ টাকা প্রকাশকাল – নভেম্বর ২০২০ ISBN 978-93-87787-34-6 নামে অনেক কিছুই আসে যায় তাই ‘শুঁড়ির সাক্ষী’ তার সার্থক নামকরনেই নিজের বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবগত করে দেয় পাঠককে। ঠিকই ধরেছেন, ‘নেশাভাঙের ঝিলমিল দুনিয়া’ নিয়েই মাত্র তিন ফর্মার ‘সাদামাটা’ হাতবই, যাতে আছে তিন খানি প্রবন্ধ - দেশী মদ, মদের চাট, ও ভাং এই তিনটি বিষয়ের উপর। ঢাকনা খুললেই মিলবে বাংলার মৌজ, চুমুক দিয়েই আবেগপ্রবণ হয়ে গর্বের সাথে আপনি বলবেন ‘বাংলা আমার’। নেশা একটু জমলেই চলে আসবে ‘মদের চাট কিংবা অবদংশ’। আর এই দুয়েই মজে মনটা একটু রঙিন হলেই রঙ বরসে, থুড়ি ‘ভাং বরসে’। তারপর? তারপর তুরীয় আনন্দে আপনি বিরাজ করবেন এই তিন জগতের নানান অজানা আনকোরা তথ্যের রম্যরসে সিক্ত হয়ে। কলেবরে ছোট হলেও বইটি একই সঙ্গে ‘বাংলার’ ইতিহাস-অর্থনীতি-আধ্যাত্মিকতার একখানা ‘পাতিয়ালা পেগ’ ।বিষয়গত মৌলিকতার দিক থেকেও ইনফোটেনমেন্ট ঘরানার একটা দুর্দান্ত উদাহরণ। বইটির পেছনে লেখকের যে দীর্ঘ গবেষণা ও পরিশ্রম রয়েছে তা সচেতন পাঠক মাত্রেই বুঝতে পারবেন। পড়েই মনে হবে বহুদিন এমন ‘নীট’ খাননি। লেখক
আমাদের 'দেওয়ালী' আর নব্বইয়ের কিছু এলোমেলো স্মৃতি- অর্ণব রায়
- Get link
- Other Apps
কাঠি অ্যান্টেনার সাদা কালো টিভি’র হিন্দি দূষণকে তখনও সিরিয়াসলি নেয়নি বাঙালি, তাই নব্বইয়ের দশকে বেড়ে ওঠা আমরা ‘দীপাবলী’, ‘দেওয়ালী’ কিংবা ‘দিওয়ালী’র তফাৎ বুঝতাম না, তবে আমাদের উত্তরবঙ্গের বাঙালিদের নিজস্ব বাংলায় আমরা ব্যপারটাকে দেওয়ালিই বলতাম। দুর্গোৎসবের দশমীর বুক ফাঁকা ভাবটার ক্ষতের উপরে সামান্য হলেও সান্ত্বনার মলম ছিল দেওয়ালী তথা হৈমন্তিক কালীপূজা। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ের আমার কৈশোর কালে কালীপূজার উৎসবের কাউন্টডাউন শুরু হত লক্ষ্মীপুজোর দিন থেকেই। লক্ষ্মীপুজোর সন্ধ্যাটাকে অপার্থিব মনে হত। হাল্কা কুয়াশার চাদর আস্তে আস্তে নেমে আসছে ঘাসের উপর। গোল থালার মত চাঁদ ধীরে ধীরে উঠছে পুব দিগন্তের পুকুরের পাশের বাঁশঝাড়ের মাথার উপর দিয়ে। বাতাসে হাল্কা রেঙ্গুন ধুপের সুবাস। ঘরে ঘরে শঙ্খধ্বনি আর উলুতে চলছে মা লক্ষ্মীর আরাধনা। আমরা পাড়ার কচি কাঁচারা সেই চাঁদের আলোয় হেঁটে বেড়াতুম এবাড়ি ওবাড়ি-তিল বা নারকেলের নাড়ু পাবার আশায়। অনেকে আবার বেজায় শক্ত চিঁড়ের নাড়ু দিত আর সেটা আমার একদম অপছন্দ ছিল। ধানক্ষেতের আলপথ ধরে হেঁটে হেঁটে চলে যেতাম মামাবাড়ি। দিদা পুজো করতেন, মাসিরা আসতেন। ভাল লাগত। দাদু দিদা মা
সবুজ ডুয়ার্স, নীল পাহাড় আর এক টুকরো ইতিহাস - অর্ণব রায়
- Get link
- Other Apps
শীত আসলেই মনটা ছুটি ছুটি করে । উত্তরবঙ্গে থাকি তাই হাত বাড়ালেই পাহাড় চা বাগান আর জঙ্গলের নীল সবুজ ক্যানভাস । কিন্তু ওই স্টেশনের কাছের লোকের ট্রেন মিস করা বলে একটা কথা আছে না , সেটা আমার ক্ষেত্রেও হাড়ে হাড়ে সত্যি । কাজের চাপে ঘরের কাছের ভালোলাগার জায়গাগুলোতেও সব সময় যাওয়া হয়ে ওঠে না । কালীপুজো, দীপাবলী আর ভাইফোঁটা মিটে যাবার পর বাঙালির প্রাণে একটা অদ্ভুত ফাঁকা ফাঁকা ভাবের সৃষ্টি হয় । সব উৎসব শেষ। ক্রিসমাস তো সেই প্রায় দেড় মাস পর । মনে সর্বক্ষণ একটা কি করি কি করি ভাব । এবছর পুজোয় কোভিড পরিস্থিতির কারণে ট্রেন বন্ধ থাকায় বন্ধুরা কেউ বাড়ি ফিরতে পারেনি । কালীপুজোর আগে ট্রেন চলায় তবুও এক বন্ধু বাড়ি ফিরতে পেরেছে । ওর সাথে প্ল্যান করছিলাম, ঠিক তথাকথিত কোনও ‘ ট্যুরিস্ট ডেসটিনেশান ’ নয়, কিন্তু মনকে ছুঁয়ে যাবে এমন কোনও জায়গায় একটা দিন কাটানোর। নীলাদ্রি আর আমি দুজনেই ডুয়ার্স সুন্দরীর প্রেমিক। আমি ইতিহাসের ছাত্র না হলেও, ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাস আমার আগ্রহের বিষয়। আর হিমালয়ের পাদদেশে অ
প্রাচীন বাংলার দুর্গাপূজার পটভূমিকায় জলপাইগুড়ি : অর্ণব রায়
- Get link
- Other Apps
আজ শরৎকালীন যে দুর্গোৎসব বাংলার অন্যতম প্রধান উৎসব তার শুরু ১৭৫৭ সালে । সেবছরই জুন মাসে পলাশির যুদ্ধে বাংলার শেষ নবাব সিরাজদ্দৌল্লার বিরুদ্ধে ইংরেজদের জয়কে ‘ সেলিব্রেট ’ করার উদ্দেশ্যে এবং বাংলার কিছু ধনী ব্যক্তি, রাজা ও জমিদার শ্রেনীর উদ্যোগে এবং মূলত ইংরেজ সেনাপতি ক্লাইভের উৎসাহেই সূচনা হয় হয় এই উৎসবের । তাঁরা চাইছিলেন এমন একটি উৎসবে পালন করতে যা হিন্দু প্রজাদের মনেও প্রভাব বিস্তার করবে আবার পলাশীর যুদ্ধের স্মারক হিসেবেও থেকে যাবে।বসল আলোচনা সভা, খোঁজ শুরু হল উৎসবের। তত্ত্ব তালাশ করে দ্যাখা গেল, কোলকাতা সন্নিহিত অঞ্চলে ১৬১০ সাল থেকে বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরি পরিবারে দুর্গাপুজোর প্রচলন থাকলেও , ১৫৮২ সালে বারো ভুঁইয়াদের অন্যতম রাজশাহীর তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ন যে উৎসব শুরু করেন তার জৌলুস ছিল দেখবার মত। এযুগের হিসেবে প্রায় এক কোটি টাকা খরচ হত সেই উৎসবে। সেই ইতিহাসের খবর দেশীয় রাজাদের মারফৎ পৌঁছায় ক্লাইভের কানেও, সেই ধাঁচেই পরিকল্পনা করা হয় উৎসবের। সেই মোতাবেক নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় ও শোভাবাজারের রাজা নবকৃষ্ণ দেবের বাড়িতে শুরু হয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ‘ উৎস